শুক্রবার, ১২ জুন, ২০১৫

অজানা গন্তবে পথচারী ও আমি



অন্তহীন এক অজানা গন্তব্যের দিকে পথ হেঁটে চলেছি সেই ছোট্টবেলা থেকেহাঁটতে হাঁটতে কতবার যে হোঁচট খেয়েছি তা গুণে রাখার মত সামর্থ্য আমার ছিল না। পথিমধ্যে হয়তো অনেক জায়গাতেই খানিকটা বিশ্রাম নিয়েছি, এরপর পুরো উদ্যমে আমার হেঁটেছি। পথ চলতে চলতে অনেক পথচারীরই দেখা পেয়েছি, তাদের কেউ হয়তো আমাকে আপন করেছে, কেউ হয়তো দূরে ঠেলে দিয়েছে। কেউ হয়তো কোনটিই করার সময় পায়নি, স্বেচ্ছায় তাদেরকে আপন করে নিয়েছি। হয়তো নিজের তাগিদে, হয়তো তাদের তাগিদে
সকলে সমান তালে পথ চলতে পারে না, ঠিক তেমনি ভাবে আমিও হয়তো অনেক পথিকের সাথে সমান তাল বজায় রাখতে পারিনি; তাই হয়তো তারা আমাকে অপ্রয়োজনীয় মনে করে পিছে ফেলেই ছুটেছে অন্তহীন অজানায়। একবারও পিছে ফিরে তাকায়নি, পাছে লজ্জায় পড়ে যায় এই ভেবে। আমি কিছু বলেনি, শুধু তাদের চলে যাওয়া ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে দেখেছি। হয়তো অস্বাভাবিক এই চাহনির মাঝে কখনো চোখের কোণে জমাট বেঁধেছিল অশ্রুকণা, বেশ খানিকটা কণা এক হয়ে যখন গড়িয়ে পড়ার আকুল চেষ্টা চালাচ্ছিল, এই আমি তখন সেগুলোকে ধরে রাখার ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালাচ্ছিলাম।

যারা আমাকে ঠেলে সরিয়ে আগে চলে গেল তাদের দেয়া ব্যথার ক্ষত যে শুকানোর নয়তবুও নানানভাবে ব্যথাগুলোকে দমিয়ে রাখার অপচেষ্টা করতাম, এখনো করি। মাঝে মাঝে মনে হতো হয়তো ভুলে গেছি পুরনো ব্যথাগুলো, মনে মনে খানিকটা আনন্দও লুটে নিতাম এই ভেবে। কিন্তু হায়! সময়মত ঠিকই মাথাচাড়া দিয়ে উঠত বেয়ারা  দুঃখগুলো। কেন যে প্রিয় মুখগুলোর দেয়া দুঃখ এতোটা বেয়ারা হয় ভেবে পাই না
জীবনে যে থেমে থাকার কোন সুযোগ নেই, তাই আবার সেই দুঃখের বোঝা কাঁধে নিয়ে হাটা শুরু করি, আবার হয়তো কেউ একইরকম বা তারচেয়েও বেশি কিছু দুঃখ দিয়ে আমার বোঝাটাকে আরেকটু ভারী করে দেয়। আমার ধারণা এর মধ্যে বেশ আনন্দ আছে, নইলে কেন মানুষগুলো এমন করবে? আশা ছিল হয়তো আমিও কোনদিন মানুষের ঘাড়ে দুঃখের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে চলে যাবো আর মজা লুটবো। বেশ কষ্ট হয় দুঃখগুলো নিয়ে হাঁটতে। সবসময়ই চাইতাম এমন কেউ হয়তো আসবে যাকে পথিমধ্যে কিছুটা দুঃখ চাপিয়ে দিয়ে নিজের বোঝা কমিয়ে নিবো। কিন্তু সেই সৌভাগ্য আজও হলোনা।
জীবন একটা বাঁশ বাগান, যেখানে শুধু বাঁশ আর বাঁশ। কত রকমের বাঁশ যে আছে জানা নেই। আমি স্বল্প-জ্ঞানী, বাঁশ বলতে দুরকম বাঁশই বুঝি। ছিলা বাঁশ আর আছিলা বাঁশকোনটার স্বাদ কিরকম সে নাহয় নাই বললাম।
আমি মানুষটা অনেক খারাপ, তাইতো কেউ চিনতেই পারলো না আমাকে, যারা চিনেছে তারাও হয়তো অন্তহীন পথ পাড়ি দেয়ার জন্যে ভুলে গেছে আমি কেআমাকে কোন প্রয়োজন আছে তাদের? কখনো ছিল? কখনো  কি হবে?
কয়েকজন সঙ্গী পথচারীকে সময়ের সাথে সাথে আরও আপন করে নিয়েছি, অনেকেই হয়তো এর মর্ম বুঝবেনা বোঝার কোন প্রয়োজনই নেই। তারা হয়তো কল্পনাও করতে পারবেনা একজন সঙ্গী পথচারীকে আমি কতটা আপন ভাবতে পারিআমি তাদেরকে ঠিক ততটাই আপন মনে করি যতটা আপন মনে করলে কেউ কাউকে বিনিময় ছাড়া কিছু দিতে পারে
আমার ধারণা, কিছু সঙ্গী পথচারী পেয়েছি যারা হয়তো কখনোই ছেড়ে যাবে না। তাদেরকে অনেক ভালোবাসিতারা আমাকে চিনতে পেরেছি কিনা এখনো জানিনা, শুধু এটুকু জানি, সময় তার অনবরত পথচলায় অনেক মানুষকেই ভুলিয়ে দেয়, কিন্তু আমি এমন কিছু মানুষ পেয়েছি যাদের সান্নিধ্য সময়কেই ভুলিয়ে দেয়